সবাই যখন পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন নিয়ে ব্যস্ত তখন লায়লাদের ঘরে বিষাদের ছায়া। এই বিষাদের আবহে লায়লাদের পরিবারের কারও মনে ঈদ আনন্দ স্পর্শ করেনি। বলা চলে এবার তাদের ঈদ আনন্দ ম্লান।
কারণ পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি লায়লার বাবা শাহাদুল ইসলাম প্যারালাইজড হয়ে শয্যাশায়ী। প্যারালাইজড বাবার উপার্জন বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি পঙ্গু হয়ে গেছে লায়লাদের পুরো পরিবার। সেই সঙ্গে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া মেধাবী লায়লার উচ্চশিক্ষার পথ বন্ধ হওয়ার পথে।
জানা যায়, নাটোরের সিংড়া উপজেলার ভাগনাগরকন্দি গ্রামের শাহাদুল ইসলাম ওরফে হাদুর দুই মেয়েসহ চার সদস্যের পরিবার। শাহাদুলের পরিবার চলে তার উপার্জনে। সারাদিন ভ্যান চালিয়ে যা আয় হয় তা দিয়েই চলতো পরিবারে। কিন্তু তিন মাস আগে হঠাৎ প্যারালাইজড হয়ে যান শাহাদুল। সেই সঙ্গে তিন মাস ধরে শয্যাশায়ী তিনি। এতে বন্ধ হয়ে গেছে তার উপার্জন।
এদিকে শাহাদুলের বড় মেয়ে লায়লার জীবন সিনেমার কাহিনির মতো। জীবন কি তা বুঝে ওঠার আগেই সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী লায়লার সঙ্গে পাশের গ্রামের এক ছেলের বিয়ে দেয়া হয়।
কিন্তু ছেলের পরিবারের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় বিচ্ছেদ হয় লায়লার। সংসার ছেড়ে আবারও পড়াশোনায় মন দেয় লায়লা, ভর্তি হয় ভাগনাগরকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ে। কিছুদিন চলার পর আবারও বন্ধ হয়ে যায় লেখাপড়া। কিন্তু মনোবল হারায়নি লায়লা। কিছুদিন পর আবারও একই বিদ্যালয়ে ভর্তি হয় সে। এবার ভালোভাবে পড়াশোনায় মন বসায় লায়লা। ফলে ২০১৮ সালের এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয় লায়লা।
এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয় লায়লা। বর্তমানে সেখানে কম্পিউটার বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সে। পাশাপাশি লায়লার ছোট বোন বিপাশা এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। সেও ভালো ফলাফল করবে বলে আশাবাদী লায়লা।
তবে হঠাৎ বাবা শাহাদুল প্যারালাইজড হয়ে শয্যাশায়ী হওয়ার কারণে পড়াশোনার খরচ বহন করতে না পারায় রাজশাহী থেকে চলে আসতে হয়েছে লায়লাকে। এখন বাবার পাশে বসেই দিনরাত কাটছে তার। সমাজের বিত্তশালীদের সহযোগিতা না পেলে হয়তো লায়লার উচ্চশিক্ষা বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ তার লেখাপড়ার খরচ চালানোর সামর্থ্য নেই পরিবারের।
এদিকে সবাই যখন পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদ উদযাপনে ব্যস্ত তখন লায়লাদের ঘরে বিষাদের ছায়া। ঈদের আনন্দের পরিবর্তে লায়লাদের ঘরে থেকে আসে কান্নার আওয়াজ। ঈদের নতুন জামা তো দূরের কথা সুচিকিৎসার অভাবে দিন দিন খারাপ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে লায়লার বাবার শারীরিক অবস্থা। চোখে-মুখে অন্ধকার দেখা পরিবারটির দিন কাটছে কান্না, হতাশ আর অনিশ্চয়তায়। প্রতি রাতে তাদের ঘর থেকে আসে কান্নার আওয়াজ।
পরিবার-পরিজন নিয়ে সবাই ভালোভাবে ঈদ করবে এমনটি প্রত্যাশা করা গেলেও লায়লার পরিবারের কান্না শুনতে হবে প্রতিবেশীদের। সমাজের বিত্তশালীরা এগিয়ে এলে হয়তো কান্না থেমে যাবে লায়লার পরিবারের সদস্যদের।
লায়লার মা বেবি বেগম জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমানে আমাদের খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাতে হয়। এ অবস্থায় স্বামীর চিকিৎসা করাতে পারছি না। যেখানে স্বামীর চিকিৎসা করাতে পারছি না সেখানে মেয়েদের লেখাপড়া করাব কীভাবে। মেয়েরা দিনরাত কাঁদে, কীভাবে কি করব বুঝতে পারছি না। যেখানে ঠিকমতো খেতে পারি না সেখানে ঈদ এলে কি আর না এলেও কি আমাদের।
তবে দুই মেয়ের লেখাপড়া চালানোর জম্য আমি সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা চাই। সবার সহযোগিতা পেলে আমার দুই মেয়ে লেখাপড়া করতে পারবে। দয়া করে সবাই আমাদের সহযোগিতা করুন।